October 11, 2024

Digital Indian Golden India

New Entertainment of India

অজানা এক গল্প

1 min read
Spread the love

আজকে বলবো এমন একজন ব্যক্তির জীবনের কথা যা শুনলে আপনিও বলবেন এনাদের মতনই তো ব্যক্তি দরকার এই পৃথিবীতে। ব্যক্তিটির নাম অরূপ দাস। জন্মস্থান চোপড়া , দাসপাড়া হলেও তাকে কাজের সূত্রে চলে আসতে হয় কলকাতায়। তিনি বর্তমানে কলকাতা পুলিশে কর্মরত, সেখানে আনআর্মড কমব্যাট এর ট্রেনার। ছোটবেলায় তিনি শিলিগুড়িতে শিখেছিলেন মার্শাল আর্ট। এটা ওনার কাছে একটা ভালোবাসা জিনিস বলতে পারেন । যাই হোক এবার শুনি তার কৃতিত্বের কথা। ২০১৭ সালে তিনি হুগলি জেলার কোন্নগরে শুরু করেন মেয়েদের জন্য বিনা মূল্যে আত্মরক্ষা ও মার্শাল আর্ট ক্লাস। প্রথমে তার কাছে ৫-৬ জন স্টুডেন্ট থাকলেও বর্তমানে সেই সংখ্যাটা এসে দাঁড়িয়েছে ১০০ এরও বেশি। কোন্নগরের অরবিন্দ বিদ্যাপীঠ স্কুলের মাঠে প্রতি রবিবার দূর দুর থেকে মেয়েরা আসে , কোলকাতা, উত্তর 24 পরগণা, হাওড়া, ডানকুনি, মধ্যমগ্রাম, বজবজ এছাড়া কোন্নগর, রিষড়া, শ্রীরামপুর তো আছেই। নিজের ডিউটির পাশাপাশি যেইটুকু সময় তিনি ফ্রি পায় সেই সবটাই দিয়ে দেয় এলাকার বিভিন্ন মেয়েদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য। আমরা জানতে চেয়েছিলাম হঠাৎ কেন তিনি বিনামূল্যে এরকম শিক্ষা দিচ্ছেন। উত্তরে খুঁজে পাই তার নিজের দিদির শ্বশুরবাড়িতে প্রতিনিয়ত অত্যাচারিত হওয়ার কথা। এই ঘটনার পর থেকে তিনি নিজের কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয় মেয়েদের শক্তিশালি করার, তাদের বিভিন্ন আত্নরক্ষার পাঠ সঙ্গে মনস্তাত্ত্বিক সচেতনতার পাঠ দেওয়ার। এখনকার দিনে মেয়েদের উপর অত্যাচার যেইভাবে দিনের পর দিন দিন বেড়েই চলেছে সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে মেয়েদের কথা ভেবে তিনি বিভিন্ন স্কুলে, কলেজে এবং কর্মস্থানে মেয়েদের আত্মরক্ষার পাঠ দিয়ে চলেছেন। কলকাতা পুলিশের ‘তেজস্বিনী’ প্রজেক্ট যেটা মেয়েদের আত্মরক্ষার জন্য করা হয়েছিল সেটা তার হাত ধরেই শুরু হয়,সেই কর্মশালা গুলিতে তিনি মেয়েদের উপর প্রতিনিয়ত হয়ে চলা অন্যায়, বাজে স্পর্শ সব কিছুর উপরেই ক্লাস করিয়েছেন । প্রায় একসঙ্গে ২৫০-৩০০ জন মেয়ে এই কর্মশালায় পাঠ নিয়েছেন। কিছু মাস পর পর কলকাতা পুলিশের উদ্দ্যোগে এই কর্মশালা হয়েছে এবং তিনি সেখানে গিয়ে মেয়েদের আত্নরক্ষার পাঠ দিয়ে এসেছেন । এই মেয়েগুলো আগের থেকে এখন মেন্টালি এবং ফিজিক্যালি খুব স্ট্রং। তৎসহ নিজে মেয়েদের এমপাওয়ারমেন্ট এর জন্য তিনি তৈরি করেন একটি সংগঠন, ‘Martial arts organization of India ’ এটি একটি গভর্নমেন্ট রেজিস্টার্ড সংস্থা। যাদের মেইন লক্ষ্যই হল মেয়েদেরকে শক্তিশালী করে তোলা, বিনামূল্যে ট্রেনিং দেওয়া। এই সংস্থা কিন্তু নন-প্রফিটেবল। সত্যি সাধুবাদ জানাতেই হয়। এই সংস্থা থেকে তিনি Jhanshi প্রজেক্ট শুরু করেন, যার জন্য ভারতের বিভিন্ন স্থানে মেয়েদেরকে বিনামূল্যে আত্মরক্ষা প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় গ্রাম থেকে শুরু করে শহরে। সমাজ সচেতন অনেক মানুষ এই প্রজেক্টে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে পাশে থেকেছেন। কখনও কল্যানী , কখনও যাদবপুর কখনও বা প্রত্যন্ত গ্রামে। এই সংস্থার অন্যান্য সদস্যরাও খুব দক্ষতার সঙ্গে বিভিন্ন গ্রামে, পিছিয়ে থাকা মানুষদের ট্রেনিং দিয়ে যাচ্ছেন ।এই সংস্থা থেকে বিনামূল্যে ক্যারাটে ,কিক-বক্সিং শিখে মেয়েরা জেলা, রাজ্য, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে প্রচুর প্রচুর মেডেল ,পুরস্কার নিয়ে আসছে সুসম্মানের সঙ্গে। স্যার এর শিক্ষায় তারা কেও কেও আজ প্রতিষ্ঠিত। এনার কাছে শিক্ষাপ্রাপ্ত কিছু ছাত্র-ছাত্রী সুযোগ পেয়ে গেছে বিভিন্ন বেসরকারি স্কুলে কাজের। আসলে তিনি আত্মরক্ষার সঙ্গে সঙ্গে আত্মনির্ভরও করতে শেখায় মেয়েদের। তার শিক্ষাপ্রাপ্ত প্রায় ৫০ জন ব্ল্যাকবেল্ট ছেলে মেয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় মেয়েদের এম্পাওয়ারমেন্ট এর উপর কাজ করছে। বিভিন্ন স্লাম এলাকার মেয়েদের তিনি ট্রেনিং দিয়েছেন। তাদের মধ্যে কালি সিং , অঞ্জলী চৌধুরী , নেহা পাসি, ঈশিকা সিং এনাদের বক্তব্য অনুযায়ী তাদের অরূপ স্যারের কাছে ট্রেনিংয়ের আগের এবং পরের জার্নির মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। তাদের অরূপ বাবুর কাছে ক্যারাটে , কিকবক্সিং ও আত্মরক্ষার পাঠ নিয়ে জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে শুরু করে হাঁটাচলা , পোশাক তৎসহ শিক্ষা ক্ষেত্রেও খুব উন্নতি হয়েছে। তাদের ফুচকাপাড়ায় এখন তারা অনেকেরই অনুপ্রেরণা। তাদের মধ্যে কেও কেও হয়তো খুব কষ্ট করে মাথার উপর একটা চাল জোগাড় করে বাস করছে। কিন্তু তাদের কাছে কিন্তু মেডেল , পুরুস্কারের কোনো অভাব নেই। তাদের পারফরমেন্স তাদের স্যারের কাছে গুরুদক্ষিণা। অরূপ বাবুর আরো স্টুডেন্টদের মধ্যে ইন্দ্রানী দেবনাথ, নবনীতা গোস্বামী, দীপিকা সাহা এনারা জানান , স্যারের কাছে ট্রেনিং এর পর তাদের সামগ্রিক অনেক উন্নতি হয়েছে। নিজেদের মধ্যে অনেক কনফিডেন্স এসেছে আগের থেকে। এনারা সকলেই এখন শহরের বিভিন্ন স্কুলে কাজ করছেন। অরূপ বাবু তার কাজের উপর থেকে কখনও সরেনি। সমাজে ভালো মানুষ তৈরি করা, সমাজকে মেয়েদের চিনতে শেখানো তার কাছে যেনো সবার আগে। তার এই এত উদ্দ্যোগে অনেক সময় বাধা এসেছে, সবাই ভালো ভাবে নেয়নি, নানা ভাবে তার কাছে প্রেসার এসেছে। কিন্তু তিনি থেমে থাকেনি। সম্প্রতি তিনি হাওড়া রুরাল পুলিশের তরফ থেকে আয়োজিত করা ‘সম্পূর্ণা’ নামক প্রজেক্টটিতেও ট্রেনিং দিয়েছেন, যার জন্য হাওড়া জেলার বিভিন্ন স্কুলে শুরু হবে মেয়েদের আত্মরক্ষার পাঠ, প্রশিক্ষণ দেবেন তারই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মেয়েরা। তাঁর সংস্থার একটা মিশন আছে ‘No more rape India’ । সত্যিই তাঁর চিন্তা ভাবনাকে আমাদের স্যালুট জানাতেই হবে। ভালো থাকবেন , জীবনে এই ভাবনা চিন্তা বজায় রেখে আরো এগিয়ে যান ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *