স্যালাইন কান্ডে তোলপাড় রাজ্যরাজনীতি
1 min readশুভজ্যোতি চক্রবর্তী : স্যালাইন কান্ডে রাজ্যের স্বাস্থ্যব্যবস্থার দিকে যখন আবারও যখন আঙুল উঠছে, ঠিক সেই সময় মুখ্যমন্ত্রীর সাংবাদিক সম্মেলন ও সেখানে কিছু সিদ্ধান্ত : মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেন, মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের সুপার, সিনিয়র ও জুনিয়র চিকিৎসক সহ মোট ১২ জনকে সাসপেন্ড করা হচ্ছে।প্রসূতি মৃত্যুর এই ঘটনার জেরে সাসপেন্ডেড ডাক্তারদের বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা দায়ের করেছে তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি। জানা যাচ্ছে, মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে প্রসূতির মৃত্যুর পর স্বাস্থ্য দফতরের তরফ থেকে একটি অভ্যন্তরীণ তদন্ত হয়। সংশ্লিষ্ট রিপোর্টের ভিত্তিতে গতকাল রাতে পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেপুটি সিএমওএইচের অভিযোগ করেন। তার ওপর ভিত্তি করে মেদিনীপুরের কোতোয়ালি থানায় দায়ের করা হয় এফআইআর।জানা যাচ্ছে, সাসপেন্ডেড চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত খুনের ধারা ছাড়া কর্তব্যে গাফিলতি ও কাউকে জেনেবুঝে বিপদে ফেলার মতো ধারাতেও মামলা করা হয়েছে।বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী জানান, রাজ্যে চিকিৎসা পরিষেবার উন্নতি হয়েছে। তা সত্ত্বেও এক প্রসূতি এবং শিশুকে বাঁচানো যায়নি। তিনি বলেন, “যাদের কাছে ভাগ্য নির্ধারণ করার ক্ষমতা রয়েছে, যাদের হাতে সন্তান জন্ম নেয়, তারা দায়িত্ব পালন করে নিশ্চয়ই দুটি প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হত।” এপ্রসঙ্গে অপারেশন থিয়েটারের ভিতরে সিসিটিভি ক্যামেরা থাকা উচিত বলে মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ওটির ভিতর সিসিটিভি ক্যামেরা থাকলে অভিযুক্তদের হাতেনাতে ধরা সম্ভব হত। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, অসুস্থদের মধ্যে একজনের শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক। তিনি জানান, অসুস্থদের পরিবারের চিকিৎসা ব্যবস্থার দিলে আঙুল তোলার অধিকার রয়েছে। ফলত পরিবার কিছু বলে থাকলে সেটা শুনতে হবেই। বাংলায় মা-মাটি-মানুষের সরকারের আমলে রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতির খতিয়ান তুলে ধরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন যে, স্বাধীনতার পর রাজ্য মেডিক্যাল কলেজের সংখ্যা ছিল ১১টি। সেই জায়গায় তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পরে বর্তমানে রাজ্যে মেডিক্যাল কলেজ হয়েছে ৩৭ টি। তার মধ্যে সরকারি মেডিক্যাল কলেজ রয়েছে ২৪ টি। নার্সিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। আশাকর্মীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া পরিকাঠামো উন্নত হয়েছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। মমতা জানান, ঘটনার দিন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে কোনও সিনিয়র চিকিৎসক ছিলেন না। রাজ্যের মুখ্য সচিব মনোজ পন্থও একই কথা বলেছেন। তিনি জানান, ওটির ভিতরে সিসি ক্যামেরা না থাকায় চিকিৎসকদের গতিবিধি জানা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি জানিয়েছেন, অস্ত্রোপচারের সময় নির্দিষ্ট নিয়ম মানা হয়নি। সিনিয়রদের পরিবর্তে অস্ত্রোপচার করেছেন জুনিয়ররা। যা ঘিরেই বিতর্কের সূত্রপাত ঘটেছে।মুখ্যমন্ত্রী জানান, ‘একই সময়ে সরকারি হাসপাতালেও কাজ করব আর বেসরকারি হাসপাতালেও করব, এটা হতে পারে না’। মুখ্যমন্ত্রী জানান, তিনি জানতে পেরেছেন, চিকিৎসক দিলীপ পাল সেদিন হাসপাতালের বাইরে অস্ত্রোপচার করছিলেন।সাংবাদিক বৈঠক করে, নিজেদের স্ট্যান্ড পয়েন্ট জানিয়ে দেন শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেন, “যদি ময়নাতদন্তের রিপোর্টে প্রসূতি মৃত্যুর কারণ হিসেবে দেখানো হয়ে থাকে সেপটিসেমিয়া, তাহলে সেখানে কি করে কর্তব্যে গাফিলতি হতে পারে। এই সাসপেনশন অবৈধ, অগণতান্ত্রিক। এই সাসপেন্ডের বিরুদ্ধে আমরা সোচ্চার হচ্ছি। আর যদি এই ১২ জন ডাক্তারের ওপর থেকে আগামী সোমবারের মধ্যে সাসপেনশন তুলে নেওয়া না হয়, তাহলে প্রতিবাদে রাস্তায় নামবে ভারতীয় জনতা পার্টি”।শুভেন্দু এখানেই থামেননি, এর সাথেই খানিকটা জোর দিয়েই বলেছেন, “যদি একজনও চিকিৎসককে ভুল ভাবে গ্রেফতার করা হয়, তাহলে যে মুহুর্তে তাঁকে গ্রেফতার করা হবে, তার পর মুহুর্তেই কোতয়ালি থানার সামনে অবস্থানে বসবে বিজেপি দল। আমরা সবরকমের আইনি সাহায্য দিতে প্রস্তুত এই ১২ জন চিকিৎসককে”।একই সাথে এই প্রসূতি মৃত্যুর মামলায় সিআইডির কাঁধে তদন্তভার দেওয়ার বিষয়ে বিরোধী দলনেতা বলেন, “এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর এটাই কাজ। এর আগে বহু ক্ষেত্রে দেখা গেছে সিআইডিকে দিয়ে তথ্যপ্রমাণ লোপাট করানো হয়েছে। এবারেও তাই করছেন তিনি। যাতে ভবিষ্যতে যদি এই বিষাক্ত স্যালাইন মামলার কেস সিবিআই-এর হাতে যায়, তাহলে তারা যাতে কোনও প্রমাণ না পায়। সিআইডি আসলে প্রমাণ লোপাটের কাজ করছে”।